ফেরাউনের দরবারে প্রথম সাক্ষাৎ: সত্যের প্রথম চ্যালেঞ্জ
Episode 11
ভূমিকা
ইতিহাসের কিছু মুহূর্ত আছে, যেখানে একজন মানুষের দাঁড়িয়ে পড়া পুরো সভ্যতার গতিপথ বদলে দেয়। ফেরাউনের দরবারে হযরত মূসা (আ.)-এর প্রথম উপস্থিতি তেমনই এক সন্ধিক্ষণ। একদিকে ক্ষমতা, অহংকার ও দাসত্বের দীর্ঘ ইতিহাস; অন্যদিকে সত্য, ন্যায় ও আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত স্পষ্ট আহ্বান। এই পর্বে আমরা প্রত্যক্ষ করি—কিভাবে সত্য প্রথমবারের মতো ক্ষমতার সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়।
ফেরাউনের দরবার: ক্ষমতার প্রতীক
মিসরের ফেরাউনের দরবার ছিল ভয় ও আনুগত্যের মঞ্চ। রাজা নয়, দেবতা—এই বিশ্বাসেই গড়ে উঠেছিল তার শাসনব্যবস্থা। দরবারের অলংকরণ, প্রহরী, যাজক ও আমলারা মিলিয়ে এটি ছিল অহংকারের দুর্গ। এখানে প্রশ্ন তোলার সাহস কেউ করত না। সত্যকে ঢুকতে হলে ভাঙতে হতো ভয়ের প্রাচীর।
ঐশী নির্দেশে অগ্রযাত্রা
সাইনাইয়ের পবিত্র আহ্বানের পর হযরত মূসা (আ.) স্পষ্ট নির্দেশ পান—ফেরাউনের কাছে গিয়ে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতে হবে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাই হযরত হারুন (আ.)। এই যাত্রা কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নয়; এটি ছিল দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য ঐশী মিশন।
দরবারে প্রথম সাক্ষাৎ
দরবারে প্রবেশের মুহূর্তেই দুই বিপরীত শক্তির মুখোমুখি হওয়া ঘটে। একদিকে স্বঘোষিত দেবতা ফেরাউন, অন্যদিকে আল্লাহর প্রেরিত নবী। হযরত মূসা (আ.) বিনীত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন—তিনি আল্লাহর রাসূল, এবং বনী ইসরাইলকে মুক্ত করার আহ্বান জানান। এই ঘোষণাই ছিল সত্যের প্রথম চ্যালেঞ্জ।
সত্যের ভাষা বনাম অহংকারের উত্তর
ফেরাউন প্রশ্ন তোলে—“তোমার প্রভু কে?”
হযরত মূসা (আ.) স্পষ্টভাবে জবাব দেন—“আমাদের প্রভু তিনি, যিনি সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন ও সঠিক পথ দেখিয়েছেন।”
এই উত্তর ফেরাউনের অহংকারে আঘাত হানে। সে সত্যকে যুক্তি দিয়ে নয়, ক্ষমতা দিয়ে দমাতে চায়। দরবারে উপহাস, সন্দেহ ও হুমকির আবহ তৈরি হয়।
মুজিজার প্রকাশ: লাঠি ও হাত
সত্যকে দৃশ্যমান করতে আল্লাহ তায়ালা মুজিজা প্রদর্শনের অনুমতি দেন। হযরত মূসা (আ.)-এর লাঠি সাপে পরিণত হয়, এবং হাত উজ্জ্বল আলোয় ঝলমল করে। দরবার স্তব্ধ হয়ে যায়। এটি কোনো জাদু নয়—এটি ছিল ঐশী নিদর্শন। তবু ফেরাউন সত্য মানতে অস্বীকার করে।
জাদুকরদের আহ্বান: ক্ষমতার কৌশল
ফেরাউন সত্যকে ঢাকতে জাদুকরদের ডাক দেয়। সে চায়—মুজিজাকে জাদু বলে প্রমাণ করতে। এটি ছিল ক্ষমতার রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—এই কৌশলই পরবর্তীতে সত্যের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে।
প্রথম চ্যালেঞ্জের তাৎপর্য
এই প্রথম সাক্ষাৎেই স্পষ্ট হয়—সত্য কখনো আপস করে না। সংখ্যায় কম হলেও সত্য দৃঢ় হলে সে ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে। হযরত মূসা (আ.) কোনো ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং মানবমুক্তির কথা বলেন। এখানেই এই পর্বের গভীর শিক্ষা নিহিত।
সমসাময়িক শিক্ষা
এই ঘটনা আজও প্রাসঙ্গিক।
-
সত্য বলার সাহস কখনো ক্ষমতার অনুমতির অপেক্ষা করে না।
-
অহংকার যুক্তিকে অস্বীকার করে, কিন্তু সত্য অবিচল থাকে।
-
ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে প্রথম ধাপই সবচেয়ে কঠিন।
উপসংহার
ফেরাউনের দরবারে হযরত মূসা (আ.)-এর প্রথম সাক্ষাৎ ছিল ইতিহাসের এক মোড় পরিবর্তনকারী মুহূর্ত। এটি ছিল সত্যের প্রথম চ্যালেঞ্জ—যা দমন করা যায়নি, বরং আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। পরবর্তী পর্বগুলোতে আমরা দেখব, কীভাবে এই সত্য ধাপে ধাপে অহংকারের সাম্রাজ্যকে ভেঙে দেয়।

Please do not enter any spam link in the comment box. ConversionConversion EmoticonEmoticon