হযরত মূসা (আঃ) – EPISODE 2: ফেরাউনের প্রাসাদে শৈশব | আল্লাহর কুদরতের এক বিস্ময়কর অধ্যায়

 

 ভূমিকা

হযরত মূসা (আঃ)-এর জীবনী মানব ইতিহাসের অন্যতম শিক্ষণীয় ও অলৌকিক কাহিনি। তাঁর জন্মের ঘটনায় যেমন আল্লাহর কুদরত স্পষ্ট, তেমনি তাঁর শৈশবকাল অতিবাহিত হয়েছে এক চরম বৈপরীত্যের মাঝে—একদিকে আল্লাহর নবী, অন্যদিকে তাঁর শৈশব কেটেছে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে। এই পর্বে আমরা জানব কীভাবে আল্লাহ তাআলা নিজের পরিকল্পনায় ফেরাউনের প্রাসাদকেই বানিয়েছিলেন হযরত মূসা (আঃ)-এর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

 ফেরাউনের ভয় ও ভবিষ্যদ্বাণী

হযরত _মূসা _(আঃ) _EPISODE _2 _ফেরাউনের _প্রাসাদে _শৈশব

ফেরাউন ছিল মিশরের স্বৈরাচারী শাসক। সে নিজেকে "রব্বুল আ‘লা" বলে দাবি করত। এক রাতে সে স্বপ্নে দেখল, বনি ইসরাঈলের এক সন্তান তার রাজত্ব ধ্বংস করবে। জ্যোতিষী ও দরবারি পণ্ডিতরা এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলে ফেরাউন ভীত হয়ে পড়ে। তখনই সে আদেশ দেয়—বনি ইসরাঈলের প্রতিটি নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যা করতে হবে।

এই ভয় থেকেই শুরু হয় এক নির্মম গণহত্যা। কিন্তু ফেরাউন জানত না, যাকে সে খুঁজছে, তাকেই আল্লাহ তাআলা তার ঘরের ভেতরেই লালন-পালনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

 নীলনদে ভাসমান শিশুর আগমন

হযরত মূসা (আঃ)-এর মা আল্লাহর নির্দেশে তাঁকে একটি সিন্দুকে রেখে নীলনদে ভাসিয়ে দেন। নদীর স্রোত সেই সিন্দুক ভাসিয়ে নিয়ে যায় সরাসরি ফেরাউনের প্রাসাদের দিকে।

এই ঘটনা প্রমাণ করে—যেখানে মানুষ ধ্বংসের পথ তৈরি করে, সেখানে আল্লাহ হেফাজতের পথ খুলে দেন। ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়ার ভূমিকা

সিন্দুকটি যখন প্রাসাদের লোকেরা তুলে আনে, তখন ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া বিনতে মুযাহিম শিশুটিকে দেখে গভীর মমতায় আবিষ্ট হয়ে পড়েন। কুরআনে উল্লেখ আছে, তিনি বলেন—

“সে আমার ও তোমার জন্য নয়নমণি।”

আছিয়া (আঃ) ছিলেন ঈমানদার নারী। তাঁর অন্তরের দোয়া ও আল্লাহর ইচ্ছায় শিশুটি রক্ষা পায়। ফেরাউন শিশুটিকে হত্যা করতে চাইলেও আছিয়ার অনুরোধে সে পিছিয়ে যায়।

 শিশুর দুধ পান না করা: আল্লাহর কৌশল

আল্লাহ তাআলা এক অপূর্ব কৌশল করলেন। শিশুমূসা (আঃ) কোনো দাইয়ের দুধই গ্রহণ করছিলেন না। ফেরাউনের প্রাসাদে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়।

ঠিক তখনই হযরত মূসা (আঃ)-এর বোন গোপনে প্রাসাদের আশপাশে অবস্থান করছিলেন। তিনি প্রস্তাব দেন—

“আমি কি এমন একজনকে দেখিয়ে দেব, যে এই শিশুর যত্ন নিতে পারবে?”

এইভাবে আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-এর মাকে ফেরাউনের প্রাসাদে দাই হিসেবে ফিরিয়ে দেন। সন্তানও মায়ের কোলে, আবার নিরাপদও—এ এক অতুলনীয় আল্লাহর পরিকল্পনা। মায়ের প্রতিদান ও আল্লাহর ওয়াদা

যে মা সন্তান হারানোর ভয়ে কেঁদেছিলেন, আল্লাহ তাকেই সন্তানের সাথে পুনর্মিলন ঘটালেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন—

“যাতে তার চোখ শীতল হয় এবং সে দুঃখ না করে।”

এখানেই আল্লাহর ওয়াদা পূর্ণতা পায়। রাজপ্রাসাদে নবীর শৈশব

ফেরাউনের প্রাসাদে হযরত মূসা (আঃ) বেড়ে উঠতে থাকেন। তিনি রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা পেলেও তাঁর হৃদয় ছিল জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আল্লাহ তাআলা শৈশব থেকেই তাঁকে দৃঢ়চেতা, ন্যায়পরায়ণ ও সত্যবাদী করে গড়ে তুলছিলেন।

ফেরাউন বুঝতেই পারেনি—যে শিশুকে সে লালন করছে, একদিন সেই শিশুই তার অহংকারের মূলে আঘাত হানবে। শিক্ষণীয় দিক

এই অধ্যায় থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই—

  • আল্লাহর পরিকল্পনার সামনে কোনো শক্তিই টিকে না।

  • বিপদের মাঝেই আল্লাহ সাহায্যের রাস্তা খুলে দেন।

  • ঈমানদার নারীর ভূমিকা ইতিহাস বদলে দিতে পারে।

  • আল্লাহ যাকে রক্ষা করতে চান, তাকে শত্রুর ঘরেও নিরাপদ রাখেন। উপসংহার

হযরত মূসা (আঃ)-এর শৈশব আমাদের শেখায়—ভয়, জুলুম ও অন্ধকারের মাঝেও আল্লাহর নূর বিদ্যমান। ফেরাউনের প্রাসাদে বড় হওয়া এই শিশুই একদিন ফেরাউনকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করাবেন। পরবর্তী পর্বে আমরা জানব সেই ঘটনার ধারাবাহিকতা।

Previous
Next Post »

Please do not enter any spam link in the comment box. ConversionConversion EmoticonEmoticon